আমার পূর্ব বাংলা কবিতার মূলভাব amar purbo bangla
সৈয়দ আলী আহসান-এর কবিতা “আমার পূর্ব-বাংলা” ব্যাখ্যা
সৈয়দ আলী আহসান তাঁর “আমার পূর্ব-বাংলা” কবিতায় পূর্ববাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শ্যামল রূপ, এবং গ্রামীণ জীবনের স্নিগ্ধতাকে এক অনুপম কাব্যিক চিত্ররূপে প্রকাশ করেছেন। কবিতাটি মূলত দেশপ্রেমময় এবং প্রকৃতিনির্ভর এক আবেগঘন রচনা। এখানে কবি তাঁর মাতৃভূমিকে তুলনা করেছেন প্রগাঢ় নিকুঞ্জ, বর্ষার স্নিগ্ধ অন্ধকার, সজীব তমালগাছ, কদম্বতরু, ফুল–লতা–পাতা, আর শস্যসমৃদ্ধ ধানক্ষেতের সঙ্গে।
প্রথম অংশ
কবিতার শুরুতেই কবি পূর্ববাংলাকে দেখিয়েছেন “অন্ধকারের তমাল” এবং “প্রগাঢ় নিকুঞ্জ” রূপে। প্রকৃতির গভীর অরণ্য, স্নিগ্ধ সন্ধ্যা, এবং মেঘে-ঢাকা আকাশের মতো এক মুগ্ধ বেদনাভরা শান্তি এখানে ফুটে উঠেছে। বর্ষার আর্দ্রতা, নদীর স্রোত, আর কালোমেঘে ভরা আকাশ যেন পূর্ববাংলার রূপকে আরো রহস্যময় ও আকর্ষণীয় করেছে।
দ্বিতীয় অংশ
এখানে কবি পূর্ববাংলার কৃষিভিত্তিক সমৃদ্ধিকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
“রাশি রাশি ধান মাটি আর পানির / কেমন নিশ্চেতন করা গন্ধ”—এই চিত্র বাংলার কৃষিজীবনের সমৃদ্ধি এবং প্রকৃতির সাথে মানুষের একাত্মতার প্রতীক।
একইসাথে কবি বিরহিণীর আকুলতা, ঘর–বাড়ির টান, এবং বিদেশ–বিমুখ মনোভাবের মধ্য দিয়ে পূর্ববাংলার প্রতি গভীর আবেগ প্রকাশ করেছেন। পূর্ববাংলা শুধু ভূমিখণ্ড নয়, এটি কবির মনের নিবিড় অভিসারক্ষেত্র।
তৃতীয় অংশ
শেষাংশে কদম্ব, লতা, নীল–হলুদ–বেগুনী ফুল, এবং জলের ধারে বসা কালোচুলের তরুণীর রূপক—সবকিছু একসাথে মিশে গেছে। এগুলো বাংলার প্রকৃতির রঙিন, প্রাণবন্ত, অথচ শান্ত এক রূপকে তুলে ধরে।
“রাঙা–উৎপল”—প্রেম, সৌন্দর্য ও জীবনশক্তির প্রতীক।
মূলভাব
কবিতার মূলভাব হলো মাতৃভূমি পূর্ববাংলা-র প্রতি কবির গভীর প্রেম ও আবেগময় অনুরাগ। প্রকৃতি, ঋতু, ধানক্ষেত, লতা–পাতা–ফুল, নদী আর গ্রামীণ গন্ধ—সবকিছু কবির মনে মাতৃভূমির সাথে প্রেমিকারূপে ধরা দিয়েছে। এটি দেশপ্রেমের এক মূর্ত প্রতীক, যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য আর হৃদয়ের আবেগ মিলেমিশে পূর্ববাংলাকে করে তুলেছে অপরূপা, স্নিগ্ধা ও অনন্ত শান্তির উৎস।
👉 সংক্ষেপে বলা যায়, কবিতাটি পূর্ববাংলার প্রাকৃতিক রূপ, কৃষিসমৃদ্ধি, আর কবির অন্তরের দেশপ্রেমিক অনুভূতির এক শিল্পিত রূপায়ণ।

