বাংলা সাহিত্যের যুগ বিভাগ | বাংলা সাহিত্যের যুগ বিভাজন
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতাদের মধ্যে দীনেশচন্দ্র সেন, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, গোপাল হালদার, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, সুকুমার সেন প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ভাষাতাত্ত্বিকদের পর্যালোচনা অনুযায়ী বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ কে তিনটি বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত পর্যায়ে বিভক্ত করা যায় –
১. প্রাচীন যুগ
২. মধ্য যুগ
বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রীচৈতন্যদেব মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের প্রধান নির্ধারক, যাঁর প্রভাবের কথা সব পণ্ডিতই গ্রাহ্য করেছেন। তাঁর প্রভাবে বিশেষত বৈষ্ণব গীতিকা আর জীবনীসাহিত্যের (চৈতন্যদেবের জীবন অবলম্বনে রচিত) বিরাট ধারা তৈরি হয়েছিল ।
মধ্যযুগে শ্রীচৈতন্য দেবের আবির্ভাবে বাঙালি জাতির মধ্যে স্পন্দিত হয়েছে মানবপ্রেমের শোণিত ধারা, নব ভাববোধের উদ্দীপনা, নব জাগরণের বাণীমন্ত্র। আর তাই শ্রীচৈতন্যের নামে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের যুগবিভাগকে চিহ্নিত করা হয়। এ যুগবিভাগ হলো –
৩. আধুনিক যুগ
আঠারো শতকের শেষার্ধে এবং ঊনবিংশ শতকের শুরুতে রাষ্ট্রিক, আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া সাহিত্যে দৃষ্ট হয় এবং বাংলা সাহিত্যে নতুন রাগিণীর সূচনা ঘটে। পাশ্চাত্য শিক্ষা, সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রভৃতির সংস্পর্শে এসে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল আধুনিক যুগে। এ যুগের প্রতিভূ হলো গদ্য সাহিত্য। এ সময়ে মানবতাবোধ, যুক্তিবাদ, সমাজসচেতনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, গদ্যের প্রতিষ্ঠা, স্বদেশপ্রেম, রোমান্টিক দৃষ্টি প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য সাহিত্যে মূর্ত হয়ে উঠে ।
বিষয় ও সাহিত্যিক বৈশিষ্টের ভিত্তিতে আধুনিক যুগকে আবার দু ভাগে ভাগ করা যায় যথা:
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের সূচনা হয় উইলিয়াম কেরী ও তার সহযোগী পন্ডিতদের হাত ধরে। তারপর একে একে আসেন রাজা রামমোহন রায়,ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং বঙ্কিমচন্দ্রের মতো প্রতিথযশা সকল সাহিত্যিক। আধুনিক যুগেই নির্মিত হয় সাহিত্যের সকল শাখা যেমন প্রবন্ধ,নাটক,উপন্যাস,ছোটগল্প,প্রহসন প্রভৃতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,মাইকেল মধুসুদন দত্ত, কাজী নজরুল ইসলামের মত সৃষ্টিশীল সকল মানুষের সান্নিধ্য পেয়ে বাংলা সাহিত্য হয় সমৃদ্ধ। যার ফলস্বরুপ আজ বিশ্ব দরবারে বাংলা সাহিত্য হয়ে উঠেছে সুবিখ্যাত ও সমাদৃত।
হিন্দু-বৌদ্ধ যুগ (৮০০ খ্রি. থেকে ১২০০ খ্রি.),
গৌড়ীয় যুগ বা চৈতন্যপূর্ব যুগ,
চৈতন্য সাহিত্য বা নবদ্বীপের প্রথম যুগ,
সংস্কার যুগ এবং
কৃষ্ণচন্দ্রীয় যুগ বা নবদ্বীপের দ্বিতীয় যুগ।
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সুবিখ্যাত গ্রন্থটির নাম Origin and Development of Bengali Language (সংক্ষেপে ODBL)। তাঁর যুগ বিভাগটি নিম্নরূপ :
প্রাচীন বা মুসলমানপূর্ব যুগ (৯৫০-১২০০ খ্রি.),
তুর্কি বিজয়ের যুগ (১২০০-১৩০০ খ্রি.),
আদি মধ্যযুগ বা প্রাকচৈতন্য যুগ (১৩০০-১৫০০ খ্রি.),
অন্ত্য মধ্যযুগ (১৫০০-১৮০০ খ্রি.) [চৈতন্যযুগ বা বৈষ্ণব সাহিত্য (১৫০০ - ১৭০০ খ্রি.) ও নবাবী আমল (১৭০০ - ১৮০০ খ্রি.)] এবং
আধুনিক যুগ (১৮০০ থেকে বর্তমান পর্যন্ত)।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মধ্যযুগকে পাঠান আমল (১২০১ - ১৫৭৬ খ্রি.) এবং মুঘল আমল (১৫৭৭ - ১৮০০ খ্রি.) এই দুই ভাগে ভাগ করেছেন ।