বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার মূলভাব

'বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ' কবিতার মূলভাব হলো রাবণের পুত্র মেঘনাদের বীরত্ব এবং মাতৃভূমি ও পরিবারের প্রতি আনুগত্যের সঙ্গে তার চাচা বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করা। কবিতাটি মূলত মেঘনাদের মুখে উচ্চারিত একটি উক্তি যেখানে সে রাবণের পুত্র হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে বিভীষণকে তার চাচা হিসেবে সম্বোধন করে এবং নিজের প্রতিজ্ঞা, ধর্ম এবং কর্তব্য পালনের জন্য দেশদ্রোহী বিভীষণকে ভর্ৎসনা করে। মেঘনাদ তার চাচা বিভীষণের প্রতি তীব্র ক্ষোভ, আপত্তি ও বেদনা প্রকাশ করে।

বিভীষণ রামচন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়ে লঙ্কার স্বার্থ, নিজ জাতি ও ভ্রাতৃধর্মকে ত্যাগ করেছেন—মেঘনাদ এই বিশ্বাসঘাতকতাকে ক্ষমা করতে পারে না।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ



মূলভাব:


বীরত্ব ও আনুগত্য: 

কবিতাটি মেঘনাদের বীরত্ব ও রাবণ-পরিবারের প্রতি গভীর আনুগত্যের এক অনন্য প্রকাশ। তিনি যখন জানতে পারেন যে বিভীষণ লক্ষ্মণকে লঙ্কায় প্রবেশ করতে সাহায্য করেছে, তখন তিনি হতবাক হয়ে যান।

বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ: 

মেঘনাদ বিভীষণকে চাচা সম্বোধন করে বলেন যে, তার এই বিশ্বাসঘাতকতা উচিত হয়নি। কারণ, বিভীষণ রাবণের ভাই এবং নিকষা সতীর সন্তান হওয়া সত্ত্বেও সে এই কাজ করেছে।

মাতৃভূমি রক্ষা: 

মেঘনাদ বুঝতে পারেন যে বিভীষণকে অনুসরণ করে লক্ষ্মণ রাবণের গৃহে প্রবেশ করেছে। এই ঘটনাটি মেঘনাদের কাছে অত্যন্ত অপমানজনক ও বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক।

কর্তব্য ও ধর্ম: 

কবিতাটি মেঘনাদের চরিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ফুটিয়ে তোলে। তিনি নিজের প্রতিজ্ঞা, ধর্ম এবং কর্তব্য পালনের জন্য নিজের চাচা বিভীষণকেও ভর্ৎসনা করতে দ্বিধা করেন না।

পরিচয়ের সংকট: 

কবিতাটি মেঘনাদের পরিচয় সংকটও তুলে ধরে। তিনি যখন বুঝতে পারেন যে বিভীষণ লক্ষ্মণকে লঙ্কায় প্রবেশ করতে সাহায্য করেছে, তখন তিনি নিজের পরিচয় নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান।

বিশ্বাসঘাতকতার প্রতি ঘৃণা:

মেঘনাদের চোখে বিভীষণ এক কপট, বিশ্বাসঘাতক ও নৈতিকভাবে পতিত ব্যক্তি। তিনি মনে করেন—
যে নিজের ভাই ও দেশকে ছেড়ে শত্রুপক্ষে যোগ দেয়, সে কোনদিন সম্মান পেতে পারে না।

রাক্ষসধর্ম ও বীরোচিত গৌরব:

মেঘনাদ রাক্ষসবীরের মর্যাদা, বীরত্ব, আনুগত্য ও আত্মসম্মানকে অত্যন্ত মূল্য দেয়।
বিভীষণের তুলনায় সে নিজেকে অনেক বেশি নৈতিক—কারণ সে নিজের পক্ষ, দেশ ও পিতার প্রতি বিশ্বস্ত।

ব্যক্তিগত বেদনা ও ক্ষোভ:

রাগের আড়ালে মেঘনাদের মনের গভীরে আছে যন্ত্রণা।
কাকা বিভীষণের নৈতিকতা ও দেবতাভক্তি—যা রাক্ষসরাজের প্রতি দায়িত্ব বিসর্জন দিয়েছে—তাকে তিনি একধরনের হৃদয়বিদারক বিচ্ছিন্নতা হিসেবে অনুভব করেন।

সংক্ষেপে, কবিতাটি মেঘনাদের বীরত্ব, আনুগত্য এবং বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করে।

©মাইনুল হাসান

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url