ওপরে এবং উপরে, দেয়া এবং দেওয়া, উল্লেখিত এবং উল্লিখিত শব্দগুলোর কোনটি সঠিক?

কিছু কিছু বাংলা শব্দের আমরা প্রায়ই ভুল প্রয়োগ এবং ভুল ব্যবহার করি। অনেক সময় বুঝতে পারিনা আসলে কোনটি সঠিক। এর মধ্যে রয়েছে ‘ওপরে এবং উপরে’ ‘দেয়া এবং দেওয়া’ ‘উল্লেখিত এবং উল্লিখিত’ ইত্যাদি। এই পোস্টে শব্দগুলোর সঠিক প্রয়োগ এবং সঠিক ব্যাবহার জানাবো।

ওপরেএবংউপরে’ — এই দুটি শব্দই বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়, তবে এদের মধ্যে উচ্চারণ প্রয়োগে সামান্য পার্থক্য রয়েছে


🔹 ‘উপরে’:

উপরে হলো শব্দটির শুদ্ধ রূপ। এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে লিখিত ভাষায় ব্যবহৃত হয় এবং এটি যথাযথ প্রমিত বাংলা

ব্যবহার:

  • সে উপরে উঠে গেল
  • বইটি টেবিলের উপরে আছে
  • ছাদে উঠার জন্য উপরে তাকাও

🔹 ‘ওপরে’:

ওপরে হলো কথ্য ভাষার রূপ, যা দৈনন্দিন কথোপকথনে বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি অনেক সময় উপভাষা বা আঞ্চলিক প্রভাবেও ব্যবহৃত হয়। সাহিত্যে ছন্দ রক্ষার্থে কখনো কখনো এটি দেখা যায়, তবে এটি প্রমিত নয়

⚠️ ব্যবহার:

  • তুমি ওপরে যাবে না?
  • ওটা ওপরে রেখো।
    (
    এই বাক্যগুলো কথ্য ভাষায় শোনা যায়, কিন্তু লিখিত প্রমিত ভাষায় "উপরে" ব্যবহার করাই শ্রেয়।)

✅ 

রূপ

শ্রেণি

 প্রয়োগ

উপরে

                শুদ্ধ/প্রমিত                        

লিখিত ভাষায় ব্যবহৃত

ওপরে

                    কথ্য

কথ্য অনানুষ্ঠানিক প্রসঙ্গে

 

দেয়াএবংদেওয়া’ — এই দুটি শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হলেও, এদের মধ্যে অর্থগত নয়, বরং রূপ প্রমিততার পার্থক্য রয়েছে


🔹 ‘দেওয়া’:

দেওয়া হলো শুদ্ধ প্রমিত রূপ এটি লিখিত প্রমিত কথ্য ভাষায় ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত

ব্যবহার:

  • বইটি তাকে দেওয়া হয়েছে
  • অনুদান দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়
  • শিক্ষক প্রশ্নপত্র দেওয়া শুরু করেছেন

🔹 ‘দেয়া’:

দেয়া হলো অপ্রমিত বা কথ্য রূপ এটি মুখের কথায় বা আঞ্চলিক ভাষায় ব্যবহৃত হয়, কিন্তু প্রমিত লিখিত বাংলা ভাষায় নয়

ব্যবহার:

  • ওকে টাকা দেয়া হয়েছে
  • আমি তো কাজটা দেয়া শেষ করলাম

(এগুলো চলিত কথ্য রূপে শোনা যায়, তবে প্রমিত লেখায় ব্যবহার অশুদ্ধ ধরা হয়।)


✅ 

রূপ

                    শ্রেণি

প্রয়োগ

দেওয়া

                        শুদ্ধ/প্রমিত

                লিখিত প্রমিত ভাষায়

দেয়া

                    অপ্রমিত/কথ্য

            মুখের ভাষায়, অনানুষ্ঠানিকভাবে

 

উল্লেখিতএবং উল্লিখিত’ — শব্দ দুটি বাংলা ভাষায় প্রায় কাছাকাছি অর্থে ব্যবহৃত হলেও, এদের গঠন, ব্যবহারযোগ্যতা শুদ্ধতা ভিন্ন নিচে বিশ্লেষণ করে দেওয়া হলো:


🔹 . উল্লিখিত শুদ্ধ প্রমিত রূপ

🔸 গঠন:

মূল ধাতু: লিখ
→ → উপসর্গ: উৎ
→ → গঠিত হয়: উল্লিখ
→ → তৎপরি কৃৎ প্রত্যয়: -ইত
→ → চূড়ান্ত রূপ: উল্লিখিত

অর্থ:

যা আগে কোথাও লেখা হয়েছে বা উল্লেখ করা হয়েছে

📚 উদাহরণ:

·         উপরোক্ত উল্লিখিত বিষয়ের আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে

·         প্রথম অনুচ্ছেদে উল্লিখিত সূত্রটি গুরুত্বপূর্ণ

📌 উল্লিখিত হলো তৎসম এবং ব্যাকরণ অনুসারে শুদ্ধ শব্দ


🔹 . উল্লেখিত অশুদ্ধ রূপ (অব্যাকরণিক)

🔸 গঠন:

মূল ধাতু: উল্লেখ (এই শব্দ নিজেই একটি সম্পূর্ণ ক্রিয়াপদ)
→ → কিন্তু এতে পৃথকভাবে -ইত যোগ করা ব্যাকরণসম্মত নয়

⚠️ সমস্যা:

উল্লেখশব্দটি একটি তৎসম বা তদ্ভব ধাতু নয়, এটি একটি সংকর ক্রিয়া/শব্দ। তাই এতে তৎসম কৃৎ-প্রত্যয় “-ইত যোগ করেউল্লেখিতবানানো ব্যাকরণসিদ্ধ নয়

ভুল উদাহরণ:

·         উপরোক্ত উল্লেখিত বক্তব্য... (শুদ্ধ নয়)


 

শব্দ

                গঠন

                   শুদ্ধতা

                        মন্তব্য

উল্লিখিত    

        উৎ + লিখ + ইত

             শুদ্ধ

                        প্রমিত ব্যাকরণসম্মত

উল্লেখিত

            উল্লেখ + ইত

             অশুদ্ধ

                        ব্যাকরণগতভাবে ভুল

 

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url