ষত্ব বিধান কী? ষত্ব বিধান কাকে বলে? ষত্ব বিধানের ৫টি নিয়ম লেখো। ষ এর ব্যবহারের ৫টি নিয়ম লেখো। ণত্ব ও ষত্ব বিধানের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করো।
ষত্ব বিধান
তৎসম শব্দের বানানে ষ এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মকে ষত্ব বিধান বলে।
ষ ব্যবহারের নিয়ম
- ঋ-কারে পরে মূর্ধন্য-ষ হয়৷ যেমন: ঋষি, বৃষ, বৃষ্টি৷
- অ, আ, বাদে অন্য স্বরবর্ণ, ক এবং র বর্ণের পরের প্রত্যয়াদির দন্ত্য-স মূর্ধন্য-ষ হয়৷ যেমন: ভবিষ্যৎ, পরিষ্কার, মুমূর্ষ ও মুমূর্ষু৷
- 'অতি', 'অভি' এমন শব্দের শেষে ই-কার উপসর্গ এবং ‘অনু’ আর ‘সু’ উপসর্গের পরে কতগুলো ধাতুর দন্ত্য-স এর মূর্ধন্য-ষ হয়৷ যেমন: অতিষ্ঠ, অনুষ্ঠান, নিষেধ, অভিষেক, বিষণ্ন (‘ণ্ন’ মূর্ধ-ণ পরে দন্ত্য-ন), সুষম৷
- নিঃ, দুঃ, বহিঃ, আবিঃ, চতুঃ, প্রাদুঃ এ শব্দগুলোর পর ক্, খ্, প্, ফ্ থাকলে বিসর্গ (ঃ) এর জায়গায় মূর্ধন্য-ষ হয়৷ যেমন: নিঃ + কাম > নিষ্কাম, দুঃ + কর > দুষ্কর, বহিঃ + কার > বহিষ্কার, নিঃ + পাপ > নিষ্পাপ৷
- কিছু শব্দ স্বভাবতই মূর্ধন্য-ষ হয়৷ যেমন: আষাঢ়, নিষ্কর, পাষাণ, ষোড়শ ইত্যাদি৷
- কতগুলো শব্দ বিশেষ নিয়মে মূর্ধন্য-ষ হয়৷ যেমন: সুষুপ্তি, বিষম, বিষয়, দুর্বিষহ, যুধিষ্ঠির ইত্যাদি৷
কোথায় কোথায় ষত্ব বিধান নিষেধ বা খাটে না/ যেখানে ষত্ব বিধানের প্রয়োগ হবে না
- সাৎ প্রত্যয়ের দন্ত্য-স এর মূর্ধন্য-ষ হয় না৷ যেমন:
- ভূমিসাৎ, ধূলিসাৎ, অকস্মাৎ৷
- খাঁটি বাংলা ও বিদেশী শব্দে মূর্ধন্য-ষ হয় না৷ যেমন:
- টেক্স, পুলিশ, জিনিস, মিসর, গ্রিস, স্টেশন, মুসাবিদা৷
- অঃ বা আঃ থাকলে তার পরে ক্, খ্, প্, ফ্ সন্ধিযুক্ত হলে বিসর্গ (ঃ) এর জায়গায় দন্ত্য-স হয়৷ যেমন:
- পুরঃ + কার = পুরস্কার,ভাঃ+ কর = ভাস্কর, তিরঃ + কার = তিরস্কার, পরঃ+ পর= পরস্পর, স্বতঃ + ফূর্ত= স্বতঃস্ফূর্ত
- অঃ বা আঃ থাকলে তার পরে ক্, খ্, প্, ফ্ ছাড়াও ত থাকলেও স হতে পারে। যেমন:
- মনঃ+ তাপ = মনস্তাপ, শিরঃ + ত্রাণ= শিরস্ত্রাণ
ণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধান-এর প্রয়োজনীয়তা
বাংলা ভাষার যে সব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে নেওয়া হয়েছে সে সব শব্দে সংস্কৃত ভাষার বানানরীতি অবিকৃত রাখা হয়েছে৷ সংস্কৃত ভাষার বানান ও উচ্চারণরীতি ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত৷ সংস্কৃত ভাষার পণ্ডিতেরা কোনো শব্দের উচ্চারণকে অনায়াস করার জন্য একটি শব্দে পরপর দুইটি ধ্বনিকে কাছাকাছি উচ্চারণস্থলের রাখার চেষ্টা করেছেন৷ মূর্ধন্য-ণ এবং দন্ত্য-ন-এর উচ্চারণ আপাতশ্রবণে কাছাকাছি মনে হলেও মূর্ধন্য-ণ উচ্চারণ করতে হয় মূর্ধা থেকে আর দন্ত্য-ন উচ্চারণ করতে হয় দন্ত থেকে৷ তাই, যে সব ধ্বনি উচ্চারণ করতে জিহ্বার অগ্রভাগ দাঁতকে স্পর্শ করে অর্থাৎ ‘ত’-বর্গীয় ধ্বনিগুলো (যেমন ত, থ, দ, ধ) উচ্চারণ করার সময় কাছাকাছি আরেকটি ধ্বনি মূর্ধা থেকে উচ্চারণ না করে দন্ত থেকে উচ্চারণ করা সহজসাধ্য৷ সেকারণে সাধারণভাবে ‘ত’-বর্গীয় ধ্বনির সাথে যুক্ত ধ্বনি দন্ত্য-ন হয়৷ একই নিয়ম অনুসারে, যেসব ধ্বনি উচ্চারণ করতে জিহবার অগ্রভাগ মূর্ধাকে স্পর্শ করে অর্থাৎ ‘ট’-বর্গীয় ধ্বনিগুলো (যেমন ট, ঠ, ড, ঢ)-র সাথে যুক্ত ধ্বনি মূর্ধন্য-ণ হয়৷ ঋ, র, ষ উচ্চারণ করতে হয় মূর্ধা থেকে আর তাই এই ধ্বনিগুলোর সাথে যুক্ত ধ্বনি হয় মূর্ধন্য-ণ৷ এখানে উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ্য যে, “বণ্টন, লুণ্ঠন”-এই শব্দগুলোর প্রথম মূর্ধন্য-ণ টি ‘ট’-বর্গীয় ধ্বনির সাথে যুক্ত হয়ে উচ্চারিত হচ্ছে, তাই এখানে ণত্ব বিধান ব্যবহৃত হবে, কিন্তু পরের দন্ত্য-ন এর আগে বিরতি থাকায় মূর্ধন্য-ণ হচ্ছে না৷ ষত্ব বিধান-এর জন্যও একই রকম নিয়ম প্রযোজ্য৷